শরীর সুস্থ রাখতে স্যালাড রাখুন খাদ্যাভ্যাসে - Salads for Diet & Weight loss at Home

স্যালাড দিয়েই শুরু, আবার স্যালাড দিয়েই শেষ। এ কেমন খাবার খাদ্যাভ্যাসের দিকে ঝুকছে সবাই?

https://pixabay.com/photo-2157208/

আমার বাবা বারাবারই খাদ্য সচেতন। তাই বাড়িতে থাকুক কিমবা রেস্তোরাঁয় – সর্বত্রই খেতে বসে স্যালাডের খোজে থাকেন। আবার বাবা বহুদিন পর রেস্তরাঁয়ে গিয়ে অবাক। মেনু কার্ডের পাতা উল্টাতেই তিনি দেখলেন প্রথম পাতাতেই শুধু হরেক রকম স্যালাডের বাহার। স্যালাডও আবার এত রকম হয়ে নাকি?



স্যালাডের নতুন ট্রেন্ড:

গোটা বিশ্বই এখন স্যালাডের দিকে ঝুঁকেছে। বিষয়েটা শুধু স্বাস্থ্য সচেতনাতাই নয়ে। বরং গরম-শীত যে কোন ঋতুতেই স্যালাড হিসাবে উপাদর। আবার বাড়িতেও অত্যন্ত অল্প সময়ে সহজে বানিয়ে ফেলা যায়ে হাজারও স্যালাড। নতুন ট্রেন্ডের হাত ধরে পঞ্ছবেঞ্জন সাজিয়ে খেতে বসা নয়ে, এক প্লেটে স্যালাডেও হতে পারে পেট ভরার খাবার।
স্যালাড মানেই যে একগুচ্ছ সবুজ শাক-পাতা তা ভাবেন না জানো। বরং সেই সব স্যালাডকে সম্পূর্ণ মিল হিসাবেই ধরা হয়ে থাকে, তাতে সবুজ শাক-পাতার সাথে থাকে ডিম-নাছ-মাংসের মতন প্রোটিন। তারমানে এক বাটি স্যালাডের থেকে আপনি প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ পেয়ে যাবেন।

শরীররে যত্ন নিতেঃ

স্যালাডে প্রচুর পরিমাণে ন্যাচেরাল ফাইবার থাকে, এগুলো কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে রক্তে শর্করার পরিমাণ, ওজন নিয়ন্ত্রন করে। এমনকি হৃদরোগ, ব্রেস্ট ক্যান্সারের আশঙ্কাও কমিয়ে দেয়। ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ স্যালাড রক্তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।

আবার শরীরের পেশি শক্তিশালী করতেও সাহায্য করে স্যালাডে। প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি সমৃদ্ধ স্যালাড শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে, আবার ত্বকেরও খেয়াল রাখে।
https://pixabay.com/photo-263746/

নাচেরাল স্যালাডঃ

যেকোনো নাচেরাল স্যালাডে শাক-সবজি, ফল, মাংস, পনির জাতিয় প্রোটিন, বাদাম জাতিয় ফ্যাট সবই থাকে। সব ক্ষেত্রেই কি পরিমাণে তা দিছেন, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। প্রাথমিক ভাবে শুরু করতে হবে লেটুস, পালং জাতিও শাক দিয়ে।
এর পর বিন্স, জুকিনি, ফুলকপি, অ্যাভোকাডো, টম্যাটো, শসা, যোগ করতে পারেন। যা কাঁচা খাওয়া যায়ে। তা কাঁচা খাওয়াই শ্রেয়। অন্যথা সবজি ভাপিয়ে নিতে পারেন। ফলের জন্য বেছে নিতে পারেন। আপেল, বেদানা, কিশমিশ কিংবা যে কোনো বেরি।
এর পরই আসে প্রোটিনের ভাগ। চিকেন ব্রেস্ট, মাছ, পনির, চিজ, ডাল যোগ করতে পারেন। সব ক্ষেত্রেই তা সিদ্ধ, ভাপানো বা সামান্য সতে করে নেওয়া জরুরী। বাদাম সাধারণত স্যালাডকে আলাদা মাত্রা দেয়। আখরোট, পেকান, আমন্ড জাতীয় বাদাম নেওয়াই ভালো। আখরোট ওমেগা থ্রি ফ্যাট অ্যাসিডে ভরপুর। অন্য বাদাম হার্ট ভালো রাখতে সহায়ক।
সবশেষে স্যালাডের ড্রেসিং। ড্রেসিং আসলে হার্ব, তেল, লেবু বা ভিনিগার মিশ্রিত তরল বা স্যালাডে আলাদা স্বাদ, গন্ধ এবং ময়শ্চার যোগ করে। স্যালাডের সঙ্গে এক-দু’টুকরো পাউরুটি বা হাতে তৈরি রুটি নিতে পারেন। তবে তা আটার রুটি হলেই ভালো।
https://pixabay.com/photo-1284592/

বিশদে স্যালাডঃ

তত্ত্ব সমৃদ্ধ স্যালাড যদি খাবারের শুরুতে খাওয়া যায়ে। তাহলে পরের দিকে খাওয়ার প্রবণতা কম থাকে। যদি সেই স্যালাডেই পরিমাণ মতো মাছ-মাংস-ডিম যোগ করা যায়ে, তা আবার আলাদা করে প্রোটিন খাওয়ার পুরন করে দেয়। শুধু স্যালাড খেলে তুলনায়ে অত্যন্ত কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহন করা হয়ে। ফলে যারা লো-কার্বোহাইড্রেটের দিকে ঝুকছেন, তারা স্যালাডকে বেছে নিতেই পারেন নিত্যদিনের ভারী খাবার হিসাবে।
পুষ্টিবিদরা বলেছেন, পালং, লেটুস, ভীষণ উপকারী। তার সঙ্গে টম্যাটো, বেলপেপার, স্ট্রবেরি, বেদানা, ক্র্যানবেরি, যোগ করলে ভালো। ভালো স্যালাডে সাধারণত কয়েক চামচ রেস্টেড বীজ দেওয়া হয়ে, কুমড়ো, তিল, সূর্যমুখী, তিসির বীজ ভাল ফ্যাট। ফলে অ্যা ধরনের বীজ বা সামান্য তেল স্যালাডকে সুস্বাদু করে তোলে। ভাল মানের ফ্যাট শরীরের জন্যো প্রয়োজনীয়।
https://pixabay.com/photo-2156723/
ড্রেসিংয়ের জন্য কোনো লো-ফ্যাট অয়েলে পছন্দের বেসিল, পার্সেল, থাইম, ধনে পাতা, ডিল, রোজমেরি, অরিগ্যানো জাতিয়, হার্ব, লেবু বা ভিনিগার ও সামান্য নুন যোগ করতে পারেন।
প্রচুর পরিমাণে ড্রেসিং স্যালাড এবং শরীর – দুইয়ের জন্যই ক্ষতিকারক। প্রচুর ড্রেসিং দিয়ে স্যালাড খেলে যে কারনে আপনি স্যালাড খাছেন সেই উদ্দেশ্যও ব্যাহত হয়ে। ড্রেসিং তৈরির জন্য হাই ফ্রুস্টোজ যুক্ত কর্ণ সিরাপ কিংবা ট্রান্স ফ্যাটও একদমই বর্জনীয়। রেস্তরাঁয়ে খেতে গেলে স্যালাডে ড্রেসিং নিজের হাতেই দিন। এর ফলে কত পরিমাণ ড্রেসিং দিছেন এবং কি পরিমাণ ফ্যাট গ্রহন করছেন, তার হিসাবও আপনার আয়েত্তে থাকবে। স্যালাড তৈরিতে প্রসেসড খাবার ব্যবহার না করাই ভাল। পাকেটজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণ প্রিজারভতিভ থাকে, যা খাদ্যের পুষ্টিগুণ নষ্ট করে দেয়। স্যালাডে চিজ রাখতেই পারেন। কিন্তু কোন চিজ শরীরের জন্য  ভাল, তা কত পরিমাণে খাছেন, সে দিকেও খেয়াল রাখাও জরুরি। এমনকি দই ব্যবহার করতে গেলেও তা লো-ফ্যাট হওয়াই বাঞ্ছনীও।
ফুল মিল স্যালাডে প্রোটিন ব্যাবহারেও যত্নবাম হওয়া জরুরি।
টোফু, হালকা মাছ, অল্প বাদাম, চিকেন, সামান্য চিংড়িই যথেষ্ট। কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। দুপুরে শুধু স্যালাড খাছি যে অনেকটা খেতে হবে, এ ধারনা ভুল। তাই ঠিক পরিমাণ দিয়ে তৈরি স্যালাড খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

এখন থেকে আর পঞ্চব্যঞ্জন নয়, বরং স্বয়ংপূর্ণ স্যালাডের এক পদে সমস্ত প্রয়োজন মেটাতেই হয়ে উঠছে খাদ্যাভ্যাসের নতুন বার্তা।

Comments

Popular Posts